• মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মান্দায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, থানায় অভিযোগ’ এসিল্যান্ডের ড্রাইভারসহ গ্রেপ্তার ৪ পেকুয়ায় জামায়াতের শিক্ষা বৈঠকে রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যের আহবান তানোরে প্রতিবন্ধীদের সাথে ইফতার ও ঈদ উপলক্ষে খাদ্য সামগ্রী বতরণ মগনামা ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল চকরিয়ায় পুলিশের উপর হামলাসহ একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি লালু ও আহমদ ডাকাতসহ গ্রেপ্তার ৩ টেকনাফে অটোরিকশা থামিয়ে অপহরণ চেষ্টা, আটক ৩ পেকুয়ায় দিনমজুরকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন    চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি, গাজী মনির সভাপতি করিম সম্পাদক চকরিয়া ব্লাড ডোনার’স সোসাইটির ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন মাধবদীর কুড়েরপাড়ে বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ

“ক্ষমতা নিয়ে বাড়াবাড়ি” সমাজে এর ভয়াবহ প্রভাব

সাম্প্রতিক খবর ডেস্কঃ / ৩০ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

লেখক
মো: নুরে ইসলাম মিলন- 

ক্ষমতা এক অদ্ভুত জিনিস। এটা যেমন গঠনমূলক হতে পারে, তেমনি ধ্বংসাত্মকও। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ক্ষমতা সমাজের উন্নয়ন, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু যখন এই ক্ষমতা নিজের স্বার্থে, অন্যকে দমিয়ে রাখার জন্য বা অহংকার প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন তা হয়ে ওঠে এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র, যা ধ্বংস করে দেয় সমাজের শান্তি ও সাম্য।

ক্ষমতার আসল অর্থ:-
ক্ষমতা মানে দায়িত্ব। যেই মানুষ বা প্রতিষ্ঠান ক্ষমতার আসনে থাকে, তাদের মূল কাজ হলো সেই ক্ষমতার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেকেই ক্ষমতাকে দায়িত্ব নয়, বরং একধরনের বিশেষ অধিকার হিসেবে দেখেন। তারা ভাবেন, ক্ষমতার মাধ্যমে তারা অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবেন, এবং চাইলে আইন-কানুনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেন। এই চিন্তাধারা থেকেই জন্ম নেয় ক্ষমতার অপব্যবহার।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও বাস্তব চিত্র:-
আমাদের সমাজে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। এটি হতে পারে প্রশাসনিক স্তরে, রাজনৈতিক অঙ্গনে, বা এমনকি পারিবারিক পরিবেশেও।

রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায়, অনেক নেতাই ক্ষমতায় বসার পর জনগণের কথা ভুলে যান। জনগণের সেবা করার বদলে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল এবং প্রতিপক্ষকে দমন করতেই ব্যস্ত থাকেন।

প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কিছু সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের ক্ষমতার বলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে, ঘুষ গ্রহণ করে, বা সঠিক সেবা দিতে গড়িমসি করে।

পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়েও কম নয়। বাবা-মা বা পরিবারের বড় সদস্যরা অনেক সময় নিজেদের অভিজ্ঞতা বা বয়সের দোহাই দিয়ে ছোটদের ওপর ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন, তাদের স্বাধীন মতামতকে গুরুত্ব দেন না। অফিস বা কর্মক্ষেত্রেও উচ্চপদস্থরা অধীনস্থদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করেন।

ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলাফল:-
ক্ষমতার এই বাড়াবাড়ি সমাজে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
১. বিশ্বাসের অভাব: যখন জনগণ দেখে যে, যাদের উপর তারা আস্থা রেখেছে, তারা সেই আস্থার মূল্য দিচ্ছে না, তখন তাদের মধ্যে প্রশাসন, রাজনীতি বা সমাজের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিশ্বাস জন্ম নেয়।
২. ন্যায়বিচারের অভাব: ক্ষমতার অপব্যবহার ন্যায়বিচারকে বিপন্ন করে। অন্যায়কারী সহজে পার পেয়ে যায়, আর নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়।
৩. সমাজে বৈষম্য: ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সমাজে ধনী-গরিব, প্রভাবশালী-অসহায় মানুষের মধ্যে ব্যবধান বাড়ে।
৪. সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা: যখন মানুষ দেখে কোনো ন্যায়বিচার নেই, তখন তারা প্রতিবাদে নামে। এই প্রতিবাদ কখনও কখনও সহিংস রূপ নেয়।

সমাধানের পথ:-
ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা, জবাবদিহিতা এবং নৈতিকতা।
১. সচেতনতা: জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে, কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়।
২. জবাবদিহিতা: যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শক্তিশালী গণমাধ্যম, স্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থা এবং কার্যকর সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নৈতিকতা: ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র—সব জায়গায় ন্যায়ের শিক্ষা দিতে হবে।

শেষ কথা:-
ক্ষমতা কখনও স্থায়ী নয়। আজ যাদের হাতে আছে, কাল তাদের হাত থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তাই ক্ষমতার আসল মূল্যায়ন হয়, যখন তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যকে দমিয়ে নয়, বরং uplift করে; ভয় দেখিয়ে নয়, বরং সম্মান দিয়ে। ক্ষমতা আসলে এক ধরনের পরীক্ষা—যেখানে পাস করার জন্য প্রয়োজন দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা এবং মানবিকতা।

ক্ষমতার বাড়াবাড়ি বন্ধ হলেই সমাজে শান্তি, ন্যায় এবং সমতার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। আর এর জন্য প্রত্যেককেই নিজের জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। কারণ, দিন শেষে ক্ষমতা মানুষের সেবার জন্য, শোষণের জন্য নয়।

লেখক
মো: নুরে ইসলাম মিলন
সভাপতি
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা
রাজশাহী বিভাগ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd