চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: চকরিয়ার বদরখালী বাজারে সরকারীভাবে লটারীর মাধ্যমে মহিলা মার্কেটে পাওয়া ৫জন নারী উদ্যোক্তার ৫টি দোকানঘর ১৬ বছর যাবত জোরপূর্বক দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় অভিযুক্ত চিহ্নিত ভূমিদস্যু ব্যক্তিরা হলেন- ফিরোজ আহমেদের ছেলে বাহাদুর, অলি উল্লাহ’র ছেলে ফরহাদ হোসেন ও ডা. আব্দুল জলিল।
ভুক্তভোগী ৫ নারী উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন দপ্তরে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মহিলাদের উদ্ভুদ্ধ করণ ও অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মহিলাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর মাধ্যমে ইবিআরআইডিপি প্রকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করেন ২০০৮ সালে। উক্ত প্রকল্পে উপকূলীয় এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নকে প্রাথমিক পর্যায়ে বাছাই করেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের খবর পেয়ে স্থানীয় বেশকিছু মহিলা আবেদন করেন। কিন্তু, আবেদনকারীদের বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে Shop Management Trading Technique Capital Formation and Management সংক্রান্ত বিষয়ে বাস্তব ধারণা ও প্রশিক্ষণের জন্য স্ব-স্ব নামে স্মারক নং- এলজিইডি/উপ/চক/৩৬-৯/০৭/৪৫২(৫), তাং- ১৬/০৭/০৯ইং মূলে উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি জারী করা হয় এবং চকরিয়া উপজেলা ও কক্সবাজার জেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ পরবর্তী প্রকল্পের কাজ আরম্ভ করার জন্য সরকারি জায়গায় ইবিআরআইডিপি প্রকল্পের অধীনে বদরখালী বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটে দোকান বরাদ্দের আবেদন করা হয়। পরে প্রশিক্ষিত মহিলাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পল্লী উন্নয়ন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, চকরিয়া কর্তৃক লটারির মাধ্যমে বদরখালী ইউনিয়নের নুরুল আজিজের স্ত্রী সোহাদা বেগম, এজাহার আহমেদের মেয়ে ছাবেকুন্নাহার, নাছির উদ্দিনের স্ত্রী শহিদা বেগম, ছিদ্দিক আহমেদের মেয়ে শাহেলা শারমিন ও হাফেজ আহমদের মেয়ে শাহিদা ইয়াছমিন সহ তারা মোট ৫ জনের নামে ৫টি দোকান চুক্তিনামা দলিল সম্পাদন করেন। এরপর বরাদ্দ পাওয়া ওইসব দোকানঘরে বহু অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন আইটেমের মালামাল দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু, এসব দোকানঘর বরাদ্দ পাওয়ার কিছুদিন না যেতেই সেসব দোকানে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমিদস্যু চক্রের। এরপর থেকে ওই ৫জন মহিলাকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে উঠেপড়ে লাগে সেই ভূমিদস্যু্ চক্রটি। তৎকালীন আওয়ামিলীগ সরকারের স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রভাব কাটিয়ে এক পর্যায়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে সফলও হয় তারা। সেই ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত (প্রায় ১৬ বছর) ওইসব ভূমিদস্যুদের দখলেই আছে এ ৫টি দোকান। কিন্তু, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও ভূমিদস্যুরা তৎকালীন আওয়ামিলীগ সরকার দলীয় লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেউ। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে, আমাদের দোকান আমাদের ফেরত দেওয়ার দাবি তুললে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে সরকারি বিশেষ বাহিনীর দপ্তরে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সেখানে উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করার পর রায় চলে আসে আমাদের পক্ষে। এরপর আমাদের দোকান আমাদের ফিরিয়ে দিতে ভূমিদস্যুদের নির্দেশ দেওয়া হলে তাদের মধ্যে একজন তা মানলেও বাকি ৩জন আমাদের দোকানঘরের চাবি এখনো হস্তান্তর করেনি। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকল স্তরের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির প্রত্যেকের মুঠোফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, এবিষয়ে জানতে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে হোসাইন আরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দোকান দখলের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এসব দোকানের মালিক ৫ জন মহিলা। এমনকি এ মার্কেটটির নামও মহিলা মার্কেট। যা বদরখালীর প্রত্যেকের জানা। কিন্তু, বিগত সময়ে একটি প্রভাবশালী চক্র জোরপূর্বক এ ৫জন মহিলার দোকানঘরগুলো দখলে নিয়েছিলো। আমিও চাই এসব দোকানঘরের প্রকৃত মালিক ওই ৫জন মহিলা তাদের দোকানগুলো ফিরে পাক।