মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন বরইতলী বনবিট এলাকার বনভূমি যেনো গণিমতের মাল! যে যেভবে পারছে এ বনবিটের অধীনস্থ বনভূমি ধ্বংসের পায়তারায় লিপ্ত হচ্ছে।
এবার বনভূমির জায়গায় বাড়ি নির্মাণের সুযোগ করে দিয়ে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ নিলেন খোদ চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বরইতলী বনবিট কর্মকর্তা! শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবতা তার ব্যতিক্রম নয়।
সরেজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরইতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বরগুনা আগর বাগান নামক এলাকায় এরশাদ নামের এক ব্যক্তিকে বনবিভাগের জায়গায় স্থায়ী ইটের দালান তৈরি করতে সুযোগ দেওয়ার জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও বরইতলী বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানকে উৎকোচ দিতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা! যার মধ্যস্থতার দায়িত্বে ছিলেন বরইতলী এলাকার হেডম্যান বেলাল। বনবিভাগে বাড়ি নির্মাণকারী এরশাদের কাছ থেকে হেডম্যান বেলালের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন বরইতলী বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। আদায়কৃত ৪০ হাজার টাকা মধ্যে চুনতির রেঞ্জার মোস্তাফিজুর রহমানের পকেটে যায় ১৫ হাজার টাকা। বাকী ২৫ হাজার টাকা বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সহ বাকীরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এরপরই বনবিভাগের জায়গায় বীরদর্পে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন এরশাদ। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসার পর সত্যতা জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বরইতলী বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের সাথে।
মুঠোফোনে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা সত্য নয় দাবি করে বলেন, এ বনবিটে এ যাবত যারা বিট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছে কেউই সুনাম নিয়ে এখান থেকে যেতে পারেনি৷ এখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারী এ বিটের বিরুদ্ধে লেগে থাকে। তবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে বিস্তারিত জানানো হবে। কিন্তু মোবাইল ফোনে জানাবো না। প্রয়োজনে আমার সাথে এসে একটু সরাসরি কথা বলবেন। এমনই রহস্যজনক এক বক্তব্য দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। তারই ১০/১৫ মিনিট পর আরেকটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে। ফোন রিসিভ করার পর জানতে পারি অপরিচিত নাম্বারটি হেডম্যান বেলালের। পরে প্রতিবেদকের নাম্বার কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আমার সাথে যোগাযোগ করতে তাকে দিয়েছে বলে জানান।
এসময় হেডম্যান বেলাল বলেন, যে বিষয়ে বিট কর্মকর্তাকে আমি (প্রতিবেদক) ফোন দিয়েছি তা সঠিক নয়। তা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে কোন কুচক্রীমহল। এসময় প্রতিবেদক বাড়ি নির্মাণকারীর নাম প্রকাশ না করার আগেই হেডম্যান বেলাল বাড়ি নির্মাণকারীকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করার প্রস্তাব জানান। পরে আমি (প্রতিবেদক) না করে দিই। অন্যদিকে, রেঞ্জারের পকেটের ১৫ হাজার টাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে একাধিকবার ফোন করা হয় রেঞ্জার মোস্তাফিজুর রহমানকে। এরপরও তিনি ফোন রিসিভ না করায়- তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে দেওয়া হয় খুদে বার্তা। খুদে বার্তা দেওয়ার পর পরই রেঞ্জার মোস্তাফিজের রেফারেন্স দিয়ে প্রতিবেদকে ম্যানেজ করতে ফোন দেন তারই অফিসের একজন কর্মচারী। তার ফোন কেটে দিয়ে ফের এ বিষয়ে জানিয়ে তাকে আবার হোয়াটসঅ্যাপ খুদে বার্তা পাঠানো হয় এবং সাথে তিনি তা দেখেন। সে সুবাদে আবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন এবং বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাওয়ার শুরুতেই প্রতিবেদকে মেজাজ দেখিয়ে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে রেঞ্জার মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে ১৫ হাজার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।
এসময় তিনি বলেন বেলাল, নামের কোন হেডম্যানকে আমি চিনি না। সে বিষয়ে বরইতলী বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানবে। এসময় তিনি কৌশল অবলম্বন করে না জানার ভান করে ঘটনাস্থল কোথায় জানতে চান। পরে প্রতিবেদক তাকে স্ব-বিস্তারে তথ্য দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরও কিছুক্ষণ পর ফের প্রতিবেদকের মুঠোফোনে ফোন দেন হেডম্যান বেলাল। এবারও তিনি প্রথমবারের মতো কৌশলে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যান। কোন মতে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে না পেরে পরদিন বৃহস্পতিবার বরইতলী বিট কর্মকর্তার নেতৃত্ব সাঁজানো হয় উচ্ছেদ নাটক। বাড়ি নির্মাণের স্থানে গিয়ে নির্মিত দেয়ালের খালি ইট বসিয়ে দিয়ে ভাঙার মতো করে প্রতিবেদকের আইওয়াশ করার চেষ্টা করে। যা প্রতিবেদকের কাছে রক্ষিত ভিডিও ফুটেজ দেখলেই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার বুঝা যায়। তাদের এমন রহস্যজনক আচরণ দেখে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দেলোয়ার হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।