জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসন্ন জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় শিবির নেতারা অংশ নেওয়ায় হট্টগোল ও সভা বয়কট করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৪ টায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয়বারের মতো জাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম। এ সময়, প্রথম সভায় উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সভায় বিনা আমন্ত্রণে শিবির নেতারাও অংশ নেয়। একপর্যায়ে এ নিয়ে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো ও প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সংগঠনের পরিচয় দিতে বলা হয়। এতে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের ৫ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শিবির নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এসময়, সভায় জাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসানের অনুপস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে সভা মুলতবি ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল আহমেদ।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাবি ছাত্র ইউনিয়নের অমর্ত্য-ঋদ্ধ প্যানেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন, সাংস্কৃতিক জোট ও জাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সভা বয়কট ঘোষণা করে শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন আখ্যা দিয়ে মিছিল করতে করতে বের হয়ে যায়। সেসময়, প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে বাকশাল ও মুজিববাদের সহযোগী আখ্যা দিয়ে মিছিল করে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন, জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদ, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনসহ অন্যান্য ব্যানারের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি স্মরণ এহসান বলেন, জাকসু সংক্রান্ত আজকের আলোচনায় শিবির নেতারা উপস্থিত থাকায় টিএসসি ভিত্তিক সাংস্কৃতিক জোটের বেশিরভাগ সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আমরা মিটিংটি বয়কট করে বের হয়ে আসি।
প্রথমত, শিবির ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে আর সাংস্কৃতিক জোট সবসময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সেক্ষেত্রে আমরা শিবিরের রাজনীতিকে সমর্থন করিনা।
তবে এসময়, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদের সদস্য সোয়াইব হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি হত্যাকান্ডের দায়ভারের কথা টানতে গেলে অনেকগুলো সংগঠনের বিষয় উঠে আসে। যদি হত্যার ঘটনার কথা বলেন তাহলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তো শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনায় জড়িত। তাহলে কি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলও নিষিদ্ধ হবে? একটি মিটিংয়ে এভাবে উগ্র আচরণ করা ফ্যাসিবাদী আচরণের শামিল। এ ক্ষেত্রে উগ্র সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করাকে আমরা অনিরাপদ মনে করি। পাপ ও ভুল সবার আছে। কেউ সাধু না। অতীতে সবাই কমবেশি ভায়োলেন্সে জড়িয়েছে। সেই জিনিসগুলো একপাশে রেখে নতুন বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির নতুন ধারা বাস্তবায়ন করা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাচ্ছে জাকসু নির্বাচন হোক। আজকের আলোচনা সভায় উপাচার্য মহোদয় উপস্থিত না থাকায় আপতত স্থগিত করা হয়েছে। আমরা এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরবর্তীতে বিভাগ ও হল কেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো।