
ইসলাম মানুষকে দায়িত্ব পালনে আমানতদার হওয়ার নির্দেশ দেয়। অর্পিত দায়িত্বে অবহেলা ও অসচেতনতা প্রদর্শন করার কারণে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে হাশরের মাঠে। ব্যক্তি, বয়স ও যোগ্যতা হিসেবে মানুষের জবাবদিহিরও তারতম্য হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মনে রেখো, তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসক তার প্রজাদের ওপর দায়িত্বশীল; সে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের ওপর দায়িত্বশীল; সে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তানদের ওপর দায়িত্বশীল; সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের ওপর দায়িত্বশীল; সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি : ৮৪৪)
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী মৃত্যুর শিকার হন দায়িত্বে অবহেলার কারণে। অথচ একজন চিকিৎসকের উচিত, তিনি তার পেশায় যথেষ্ট যত্নশীল হবেন। রোগীর অসংযত আচরণে ধৈর্যের পরিচয় দেবেন। কঠোরতা প্রদর্শন না করে কোমল ভাষায় কথা বলবেন। তাকে ভয় না দেখিয়ে অভয় দেবেন। তার প্রতি কল্যাণকামী হবেন। রোগীর জন্য সবচেয়ে উপকারী যে পরামর্শটি তাই দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কাছে পরামর্শ চায়, সে যেন তাকে উত্তম পরামর্শ দেয়’ (বুখারি : ৩/৭২)। কিন্তু বর্তমান সমাজে এর পুরোপুরি উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিবেকহীনরা বিবেকবানের ওপর ঠাঁই করে নিচ্ছে, মানবিক মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, অযোগ্যরা যোগ্যদের স্থান দখল করে নিচ্ছে। একজন চিকিৎসক হয়েও রোগীকে অভয় দেওয়ার পরিবর্তে ভয় দেখিয়ে তাকে মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে অনেক রোগী হার্ট অ্যাটাক করেও মারা যাচ্ছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোগের চিকিৎসা করে, অথচ তার প্রতিষেধক তার জানা নেই সে দায়ী বলে গণ্য হবে।’ (নাসায়ি : ৪৭৩০)
ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। কর্মক্ষেত্রে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। আর একজন চাকরিজীবীর জন্য তার কাজের নির্ধারিত সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। একজন মুমিনের দ্বারা কখনো আমানতের খেয়ানত হবে এটি অকল্পনীয়। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা সফল মুমিনের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘(মুমিনদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সুরা মুমিনুন : ৮)
আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মানুষকে দুনিয়াতে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠিয়েছেন। এ নির্ধারিত দায়িত্ব যারা সফলতার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে পালন করেন তারা সার্থক ও নন্দিত। জনগণের হৃদয়ে তারা শ্রদ্ধাভাজন হিসেবে চিরভাস্বর হয়ে থাকেন। আর দায়িত্ব পালনে যারা বিফল তারা ব্যর্থ ও নিন্দিত, ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃণিতও। যদি প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সজাগ হয় এবং আখেরাতে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে আপন দায়িত্ব পালন করে, তা হলে সমাজের সিংহভাগ অভিযোগ ও সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ মুমিন সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে। আল্লাহর ভয়ে অন্যায় থেকে বিরত থাকে। নিশ্চয় সে জানে যে, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে, তা সে (কেয়ামতের দিন) দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দকর্ম করলে, তাও সে দেখতে পাবে।’ (সুরা জিলজাল : ৭-৮) – সময়ের আলো