চট্টগ্রাম, প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের পটিয়ায়  আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দোসর সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগানদাতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, প্রতারক এবং বহু অপকর্মের হোতা আ.ন.ম সেলিম উদ্দিন চৌধুরী (৪৮) প্রকাশ ভূট্টোকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। সে উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হিলচিয়া গ্রামের মৃত আহমদ নবীর পুত্র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

পুলিশ ও তার এলাকায় লোকজন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আ ন ম সেলিম উদ্দিনের  বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় পটিয়া থানায় ৮ টি নিয়মিত মামলাসহ প্রায় ১০টি অভিযোগ রয়েছে। তার নিজ গ্রামে ভূট্টো নামে পরিচিতি থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে কখনো আ ন ম সেলিম উদ্দিন চৌধুরী, সেলিম উদ্দিনসহ ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। সে কখনো আওয়ামী লীগ নেতা, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে নামে বেনামে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শোভনদন্ডীর হাতিয়ার ঘোনা এলাকায় কাজী এবাদুল্লাহ শাহ জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার হামলা, গুলি বর্ষনের মতো ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটির অনেক নিরীহ লোককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল সে।

গত ৪ আগস্ট পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ভাংচুর ও গুলি চালানোসহ সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক পটিয়া শাখা থেকে প্রায় এক কোটি টাকার ঋণ নেয় প্রতারক সেলিম। উক্ত টাকা আতœসাৎ করায় সেলিম বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপী তালিকায় রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলাও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে হাটহাজারী উপজেলার সৈয়দ মোরশেদুল আমিন নামের এক ঠিকাদারের প্রায় ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। এছাড়া নগরীর লালদিঘী এলাকার ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানের সাথে পাথর ব্যবসা করে ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলাটি পিবিআই তদন্ত শেষে সেলিম উদ্দিনের নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছেন।

সৈয়দ মোরশেদুল আমিন নামের ওই ঠিকাদার জানান, আ.ন.ম সেলিম একজন বড় মাপের প্রতারক। আমি আমার পাওনা টাকা চাইলে সে আমাকে পটিয়ার সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা বদিউল আলমের প্রভাব দেখিয়ে হুমকি-ধমকি দিত। নিরুপায় হয়ে আমি আদালতের দারস্থ হয়েছি।

পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, আ ন ম সেলিম উদ্দিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দোসর সন্ত্রাসীদের অর্থ যোগান দিয়ে সংগঠিত করে পটিয়ায় অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করতে পরিকল্পনা করছিল। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনাসহ একাধিক ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা ও হত্যা চেষ্টাসহ চারটি মামলা রজু করার প্রক্রিয়া চলছে।