লেখক : ইউনুস আহমেদঃ আরবি বর্ষের ৩য় মাস রবিউল আউয়াল মাস আসলেই আমাদের দেশের কিছু ভাইয়েরা অতি উৎসুকে ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন করে থাকেন। তারা বলে সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ হলো ঈদে মিলাদুন নবী।
ঈদে মিলাদুন নবী অর্থ এককথায় নবীজির জন্মোৎসব। অর্থাৎ তাদের মতানুযায়ী মাহে রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ মহানবী সাঃ পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। এজন্যই প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাস আসলে তারা ঈদে মিলাদুন নবী তথা খুশি উদযাপন করে থাকেন। এখন বোধগম্য বিষয় হচ্ছে এই খুশি উদযাপন শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটা যুক্তিযুক্ত!
ইসলামের প্রথম তিন যুগে অর্থাৎ (সাহাবী, তাবেয়ী, তাবেতাবেয়ী) এই ঈদ ছিল না। সহীহ হাদিস তো দুরের কোন একটি জয়িফ হাদিস দ্বারা ও প্রচলিত জন্মোৎসব প্রমাণিত নয়, রাসুলের জীবদ্দশায় কিংবা পরে কোনএকজন সাহাবী কর্তৃক তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
রাসুল সাঃ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমানিত নয় এমন বিষয় ইবাদত মনে করে পালন করলে তা বেদাত। সুতরাং কুরআন সুন্নাহ বহির্ভূত যে ইবাদত মনগড়া প্রচলন হয় তাই বেদাত।
রাসুল সাঃ বলেন ; যে ব্যাক্তি আমাদের শরিয়তে নেই এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল তা প্রত্যাখ্যাত।
তিনি আরও বলেন ; তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা থেকে সাবধান থাক, নিশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বেদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আতই গোমরাহি, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।
ঈদে মিলাদুন নবীর উৎপত্তি
ক্রুসেড বিজেতা মিসরের সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী (৫৩২-৫৮৯ হিঃ) কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী (৫৮৬-৬৩০ হিঃ) সর্বপ্রথম কারো মতে ৬০৪ হিঃ এবং কারো মতে ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান রাসূলের মৃত্যুর প্রায় ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। এই দিন তারা মীলাদুন্নবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হতেন। গভর্ণর নিজে তাতে অংশ নিতেন। আর এই অনুষ্ঠানের সমর্থনে তৎকালীন আলেম সমাজের মধ্যে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন আবুল খাত্ত্বাব ওমর বিন দেহিইয়াহ (৫৪৪-৬৩৩ হিঃ)। তিনি মীলাদের সমর্থনে বহু জাল ও বানাওয়াট হাদীছ জমা করেন।
উল্লেখিত হাদিস ও ইতিহাস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঈদে মিলাদুন নবী একটি সুস্পষ্ট বেদ’আত ও গর্হিত কাজ।
রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মদিন ছিল না। যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব মতে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সঠিক জন্মদিবস হয় ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার। ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার ছিল তাঁর মৃত্যুদিবস। অথচ ১২ তারিখ রাসূলের মৃত্যুদিবসেই তাঁর জন্মবার্ষিকী বা মীলাদুন্নবী’র অনুষ্ঠান করা হয়।
জ্ঞাতব্য বিষয় হলো ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কারো মৃত্যু দিবস নিয়ে কান্না বা অনু সূচনা করা। কারো মৃতের পরে তার জন্মোৎসব পালন করা যায় না।
এক হাদিসে আছে বিশ্বনবী সাঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সোমবার আমি দুনিয়ায় এসেছি তাই রোজা রাখি। এ হাদিস থেকে বুঝা যায় বড় বড় সামিয়ানা, জুলুস, আনন্দ পূর্তি নয় জন্মোৎসব পালন করতে হলে রোজা রাখার মাধ্যমে করতে হবে।
তাছাড়া উপমহাদেশের আলেমগণ
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী শায়খ আহমাদ সারহিন্দী, আল্লামা হায়াত সিন্ধী, রশীদ আহমাদ গাংগোহী, আশরাফ আলী থানভী, মাহমূদুল হাসান দেউবন্দী, আহমাদ আলী সাহারানপুরী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।
কাজেই আমরা সাধারণ মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে দ্বীনি যে কোনো কাজ করলে তার বিনিময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির জন্য করা লাগবে। যদি ইবাদতের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত লাভ করতে না পারি বরং তিনি রাগান্বিত হন তাহলে তাতে সবকিছু ব্যার্থ।
উপরোক্ত বিষয় থেকে উপলব্ধি হয় যে, ঈদ মিলাদুন নবী রাসুলের যুগে ছিল না সাহাবারাও করেন নাই , তার মৃত্যুর প্রায় ৫৯০ বছর পরে ইরাকের শিয়া কতৃক প্রনোদিত একটি বিবর্জিত কুসংস্কার। যা পালনে কল্যাণ তো নেই বরং জাহান্নাম পর্যন্ত চলে যায়। অতএব যেকোনো ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রিয়নবী সাঃ আনুগত্যের মাপকাঠিতে হতে হবে তবেই ইহকাল ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত হবে।