মোঃ কামাল উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন হারবাং বনবিটের বনভূমি যেনো গণিমতের মাল! বনরক্ষক ও বনখেকোরা একাকার হয়ে যে যার মতো মেতে উঠেছে বনভূমি ধ্বংসে। বনবিট কার্যালয়ের নাকের ডগায় প্রতিনিয়ত বনভূমি দখল করে গড়ে উঠছে কাচা-পাকা স্থায়ী বসতবাড়িসহ নানান স্থাপনা। সেই সাথে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়। এরপরও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্তারা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারবাং বনবিটের অধীনে বনবিভাগের জায়গায় যতো দখল-বেদখল হচ্ছে তার নেপথ্যে অন্যতম হোতা ওই বিটেরই বন পাহারাদার (ফরেষ্টগার্ড) মহসিন হাওলাদার! বনখেকোরা বনভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ, পাহাড় কর্তন, সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তনসহ বনভূমিতে পানের বরজ করার আগেই ফরেষ্ট গার্ড মহসিন হাওলাদার এর শরণাপন্ন হন।
কারণ, তাকে ম্যানেজ করতে পারলেই বনখেকো বা বনভূমি দখলবাজদের আর কোন বাঁধা থাকে না। শুনতে কাল্পনিক হলেও বাস্তবতা তার ব্যতিক্রম নয়। কারণ, শুরুতে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে, অনুসন্ধানে উঠে আসে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের সাথে ফরেষ্টগার্ড মহসিন হাওলাদারের অনৈতিক কর্মকান্ডের বাস্তবতা। হারবাং ৮নং ওয়ার্ডের কোরবানিয়াঘোনা এলাকায় গেলে দেখা যায়, বনভূমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ২টি পাকা বসতবাড়ি।
এসময় ওই বাড়ির কর্তার অনুপস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানান, হারবাং বনবিটকে ম্যানেজ করেই তারা বাড়ি নির্মাণ করছে। হারবাং বনবিটের কাকে ম্যানেজ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে ওই মহিলা বলেন- বনবিটের মহসিন হাওলাদারকে তাদের গৃহকর্তা ম্যানেজ করেছে। অন্যদিকে, হারবাং ইনানী লাগোয়া পূর্বে ২০-২১ অর্থ বছরের সামাজিক বনায়নের রোপিত গাছ কর্তন করে নিয়ে যায় গিয়াস উদ্দিন নামের এক বনখেকো।
যার নেপথ্যে অন্যতম যোগসাজশদাতা হিসেবে সেখানেও সমানভাবে বন পাহারাদার (ফরেষ্টগার্ড) মহসিন হাওলাদারের কথা শোনা যায়। এছাড়াও হারবাং বনবিটের অধীনে অন্তত ১৫০/২০০টি পানের বরজ রয়েছে। যার প্রত্যেকটি বরজের মালিকদের হারবাং বনবিটের ফরেষ্টগার্ড মহসিন হাওলাদারকে ম্যানেজ করতে হয় বলে জানান বরজ মালিকরা। নতুন করে পানের বরজ করলে ১০হাজার ও পুরাতন পানের বরজে ৫হাজার টাকা দিতে হয়েছে ফরেষ্ট গার্ড মহসিনকে। এছাড়াও সম্প্রতি পূর্ব হারবাংয়ের বাইঘ্যাঘোনা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে বাবুল নামের এক ব্যক্তি বনভূমি দখল করে কাচা বসতবাড়ি নির্মাণ করে।
এ বসতবাড়ি নির্মাণ করতেও স্থানীয় বনবিভাগের দালাল শাহেদ মাঝির মাধ্যমে ১৭ হাজার টাকা নেয় বন পাহারাদার মহসিন হাওলাদার। এদিকে, এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রতিবেদকের হাতে আসার পর এবিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বন পাহারাদার মহসিন হাওলাদারের সাথে। এসময় প্রতিবেদককে বলেন, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের আগে বনবিভাগে বসতবাড়ি নির্মাণ, পাহাড় কর্তন, সামাজিক বনায়ন কর্তন করার সুযোগ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিলেও ৫ তারিখের পরে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ায় তেমন একটা সুবিধা নিতে পারেননি বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, হারবাং ইনানীর পূর্বে গিয়াস উদ্দিন কর্তৃক সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তনের জন্য গত ২৪ তারিখ তাকে ম্যানেজ করার জন্য তার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কোন ধরনের টাকা-পয়সা নেননি বলে জানান। এছাড়াও বসতবাড়ি নির্মাণের সকল তথ্য তার কাছে থাকলেও কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন করেননি বলেও দাবি করেন তিনি। তার সাথে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের কথোপকথনের কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বনভূমিতে আগে যে পুরাতন বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে তা উচ্ছেদে উর্ধতনমহলে আবেদন করা হয়েছে। তবে, নতুন করে বাড়ি নির্মাণ, পাহাড় কর্তন, বা সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার কোন সুযোগ নেই। হারবাংয়ে দখল বাণিজ্যের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। শীঘ্রই তদন্তপূর্বক বনবিভাগের ফরেষ্ট গার্ড মহসিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং খোঁজখবর নিয়ে সদ্য নির্মিত সব বাড়ি উচ্ছেদ করা হবে।