লেখক: মো: ইউনুস আহমেদঃ সম্প্রতি বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর নতুন করে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটিতে নেওয়া হয়নি কোনো ধার্মিক, ইসলামিক জ্ঞানের অধিকারী, বা সভ্যসুশীল কাউকে। যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের কেউ নাস্তিক, কেউ শাহবাগী,কেউ ধর্মদ্রোহী আবার কেউ আহলে কুরআন। তারা যত্রতত্র পাঠ্যপুস্তকে তাদের মনগড়া নাস্তিক্যবাদ, সমকামিতা, এলজিবিটি সহ ইসলামবিবর্জি সব মনোভাব পাঠ্যক্রমে পুষ করার পায়তারা করছে । সেই সুবাদে LGBT তথা সমকামিতার ভয়ালথাবা এতটা ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে যে, শুধু পুস্তকিকরণ নয় ব্রেক বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেক বিদ্যালয়ে তা হাতেকলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আবার উচ্চপর্যায়ের শিক্ষিত কেউ কেউ সমকামিতার পক্ষে দালালী ও করে যাচ্ছে।
LGBT এর সংজ্ঞা:- এলজিবিটি বলতে বোঝায় “লেসবিয়ান, গে, Bisexual ও transgender অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী।
Homosexuality অর্থাৎ সমকামিতা বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণ কে বোঝায়। যৌন অভিমুখিতা হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি আবেগীয়, রোমান্টিক ও যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী কাঠামোবিন্যাস ।
উভয়ের সমন্বয়কথা হলো নারী- নারীতে, পুরুষে -পুরুষে সেক্সুয়ালি কামবাসনায় আসক্ত হওয়া। যা সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী সভ্য সুশীল কোনো জাতি গ্রহণ করতে পারে না।
পৃথিবীর সর্বপ্রথম ইসলামের নবী হজরত লোত আঃ এর জাতি এ অপকর্মে লিপ্ত হয়। পরে আল্লাহ তায়ালা তাদের এই কুকর্মের ভয়াবহ পরিনাম এবং আল্লাহ তায়ালার নাফরমানির শাস্তির কথা জানিয়ে দিতে প্রেরণ করলেন লোত আঃ কে। কিন্তু ঐ কওম তার কথা না শুনে উল্টো তাকে নানাবিধ কষ্ট যন্ত্রণা দিতে থাকে, আর তাদের যে সমকামিতা নামক অপকর্ম ও নাফরমানিতে বরাবরই লিপ্ত রয়েছে। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা হজরত লোত আঃ এর বদদোয়ায় তাদের উপর নেমে আসে বিভীষিকাময় শাস্তি।
সমকামিতা সম্পর্কে ইসলাম ও বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ:- সমকামিতা নামক এই মানবতাবিধ্বংসী অপকর্ম পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম চালু হলেও এটি বিশ্বের ধৃষ্টতাপূর্ণ নিকৃষ্ট কাজ হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তখনই ঐ জাতিকে কুপোকাত করে দেয়। এরপর থেকে আর কোনো যুগে, কোনো জাতি এই ভ্রষ্ট কাজের প্রচলন করতে দুঃসাহস করে নাই। উক্ত ঘটনার সহস্রাধিক বছরের পরে অত্যাধুনিক যুক্তি, প্রযুক্তির যুগে এসে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তা আজ দুর্যোগে পরিনত হয়েছে।
এই অপকর্মের শাস্তি মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারপর যখন আমার ফায়সালার সময় এসে গেলো, আমি গোটা জনপদটি উল্টে দিলাম এবং তার ওপর পাকা মাটির পাথর অবিরামভাবে বর্ষণ করলাম। ( সুরা হুদ আয়াত নং ৪২)
ব্যাখ্যা- সম্ভবত একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের আকারে এ আযাব এসেছিল। ভূমিকম্প জনবসতিটিকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল এবং অগ্নুৎপাতের ফলে তার ওপর হয়েছিল ব্যাপক হারে পাথর বৃষ্টি। পাকা মাটির পাথর বলতে সম্ভবত এমন মাটি বুঝানো হয়েছে যা আগ্নেয়গিরির আওতাধীন এলাকার ভূগর্ভস্থ উত্তাপ ও লাভার প্রভাবে পাথরে পরিণত হয়। আজ পর্যন্ত লূত সাগরের (dead Sea) দক্ষিণ ও পূর্ব এলাকায় এ পাথর বর্ষণের চিহ্ন সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়।
এ শাস্তির কথা জানার পরে ইহুদি, খৃষ্টান, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, জায়োনিস্ট কেউই সমকামিতা নামক মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ার চিন্তা করতে পারে না।
একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এটা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ কাজ: হজরত আবু সাইদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত; রসুলূল্লাহ সাঃ বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না, কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না। ( সহিহ মুসলিম)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সাঃ বলেছেন: কোন নারী যেন তার দেখা অন্য নারীর দেহের বর্ণনা নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে না দেয়, যেন সে তাকে (ঐ নারীকে) চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছে। (সহিহ বোখারী )
হযরত ইবন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। ( তিরমিজি )
যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত। যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।” এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসনাদ আহমদ )
শায়েখ বিন বায রহঃ বলেন: সমকামিতার শাস্তি হলো হত্যা। এ ব্যাপারে সাহাবিদের সম্মিলিত অভিমত রয়েছে। তারা সকলে একমত যে, সমকামিকে হত্যা করা হবে চাই সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত।
তাছাড়া সমকামিতাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ প্রাণঘাতী এইডস সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সমকামিতা একটি চরম ঘৃণিত সামাজিক অপরাধ। এর দ্বারা সমাজে নৈতিক বিপর্যয়, পারিবারিক ভাঙন এবং চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক Sigmund Freud তার The Psychopathology of Everyday Life গ্রন্থে লিখেছেন, এই সমমৈথুন নিষ্ফল ও ব্যার্থ প্রচেষ্টা মাত্র। এর পরিণাম দুঃখ ও চিন্তা ভারাক্রান্ততা এবং শেষপর্যন্ত অপমৃত্যু ছাড়া কিছু নয়।
অতএব উপরোল্লিখিত সকল টপিক থেকে বুঝা যায় সমকামিতা, উভকামিতা বা ট্রান্সজেন্ডার হলো একটি মানবতা বিধ্বংসী,অশালীন, অসভ্য ও সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজ। যা আমাদের সমাজে শিক্ষার্থীদের মগজে পুষ করা মানে তার আগামীর অদূরদর্শী স্বপ্নকে অকালে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। এ ঘৃণ্য অপকর্ম গণ্ডমূর্খ, নাস্তিক, মস্তিষ্ক বিকৃত মাতাল বয় আর কেউ সাপোর্ট করতে পারে না।
আমার কথা হলো, এটি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। যা বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে। কেননা এক. মুসলমানদের ছেলেমেয়ে যেন এ কুকর্মে লিপ্ত হয়ে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণ করে। দুই. মুসলমানরা পুরুষে পুরুষে, নারী নারীতে আসক্ত হয়ে নারী-পুরুষের মধুর মিলন থেকে যেন বিরত থাকে। ফলে তাদের ঔরস থেকে সন্তানসন্ততি জন্ম লাভ করে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি না পাক।
উপসংহার: সুশিক্ষা নামক মেরুদণ্ড কে মজবুত রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রহরী হতে হবে। কেন না শিক্ষা যদি অকেজো অকার্য কিংবা কুশিক্ষায় পরিনত হয় তবে তা তো আর আগামীর দুর্গম পথে আলো দেখাবেনা, মানববিরোধীদের পাতানো ফাঁদে বিচক্ষণতার সহিত পা বাড়াতে না জানলে আগামীর সব প্ল্যান নিমিষেই চুর্ণ হয়ে পরিশেষে দুকূলেই এর কড়ায়গণ্ডায় হিসাব কষতে হবে।