• শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন

সেদিন কেউ এগিয়ে আসেনি, আক্ষেপ আবরারের মায়ের

সাম্প্রতিক খবর ডেস্কঃ / ১৪৭ Time View
Update : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪

ছেলে আবরার ফাহাদের হাতঘড়ি, ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, নামাজের টুপি, তসবি, ব্রাশ, না খাওয়া চকলেট, জুতা, পোশাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, ব্যবহারের কসমেটিকসসহ নিত্য ব্যবহারের সব জিনিস যত্নে রেখেছেন মা।

বিভিন্ন পুরস্কার এমনকি না পরা নতুন জামাও আছে পরম যত্নে।

এখনো খোলেননি প্যাকেট। হলে পরনের পোশাকও আছে। সবই ছেলের থাকার ঘরেই রাখা। থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে ছেলের বই।

কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ সড়কের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িতে বড় ছেলে আবরার ফাহাদের এসব জিনিস নিয়ে স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন মা রোকেয়া খাতুন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ।

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি।

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ব্র্যাকের অডিটর হিসাবে ঢাকায় চাকরি করেন। ছোটভাই পড়ালেখার জন্য থাকেন ঢাকায়। কুষ্টিয়ার বাসায় শুধু থাকেন আবরারের মা। তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী, সেখানে থাকেন না কেউ।

রোববার বিকেলে নিজ বাসায় আলমারিতে রাখা আবরারের ব্যবহৃত সামগ্রীগুলো বার দেখছিলেন মা রোকেয়া। বাংলানিউজের এই প্রতিবেদক গিয়ে এমনটি দেখতে পান।

পাঁচ বছর আগের কথা স্মরণ করে রোকেয়া খাতুন বলছিলেন, যেদিন আমার ছেলে বাড়ি থেকে গিয়েছিল, সেদিন ছিল ৬ তারিখ, রোববার। ঠিক ৫ বছর পর রোববার, ৬ তারিখ। এ দিনেই সকালে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। বারবার কল দিয়ে নিজের অবস্থান জানাচ্ছিল। যানজট ছিল না, তাও বারবার বলছিল, দেরি হচ্ছে।

ছেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে তিনি বলেন, সেদিন কেউ এগিয়ে আসেনি। কত ছাত্র ছিল, দারোয়ান ছিল, কেউ এগিয়ে আসেনি। আমার ছেলেকে ওরা শিবির বলে মেরে ফেলেছে। আমার ছেলেকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে। ছেলের কথাগুলো আজও আমার কানে বাজে। ৫ বছর চলে গেছে, কিছুই ভুলতে পারিনি।

আবরার হত্যাকাণ্ডে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।

মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীর মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন হয়। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায়।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। তাদের মধ্যে মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না।

আবরারের মা বলেন, নিম্ন আদালতে মামলার রায় হয়েছিল। আসামি যারা পলাতক, রয়েছে তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং দ্রুত রায়টা যেন কার্যকর করা হয়।

ছেলের দেশপ্রেমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার ছেলে দেশের মানুষের জন্য ফেসবুকে লিখেছিল। ও দেশকে অনেক ভালোবাসতো। ও কোন দল বা রাজনীতির কারণে ফেসবুকে লেখেনি। আমরা সবাই চাই, দেশের সাধারণ মানুষ ভালো থাকুক

গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের জন্য দোয়া করেন তিনি। সঙ্গে নিজের ছেলের জন্যও দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন রোকেয়া খাতুন। – বাংলানিউজ ২৪


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd