লেখক : মো: ইউনুস আহমেদ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ কর্তৃক কোটা বিরোধী এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন। সময়ের অপ্রতিরোধ্য গতিতে দফা, দাবি ও বাড়তে থাকে সরকারের কাছে ছাত্রদের। উত্তাপিত দাবি গুলো মেনে না নেওয়াতে আন্দোলনের রূপরেখা পাল্টে হয় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। ইতোমধ্যে রাজপথে অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রাণ হারিয়েছে। জীবন গেল কিশোর-কিশোরী সহ অবুঝ শিশুদেরও।
এ আন্দোলন মূলত সরকার ও সরকারি চাকরিজীবী এবং আগামীতে সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের। এ আন্দোলনে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার ছাত্র-শিক্ষকদের কোনোপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই, নেই তাদের কোনো স্বার্থ বা অধিকার।
কারণ তারা আবহমানকাল থেকে সরকারি তহবিল থেকে কোনোপ্রকার অনুদান কিংবা আর্থিক সহায়তা নেয় না। দীর্ঘ একটি সময় ধরে চেষ্টা প্রচেষ্টার পর পড়ালেখার শেষে কপালে জুটে না কোনো সরকারি চাকরি বা সরকারি সহযোগিতায় উচ্চ পদস্থ কোনো কর্মসংস্থান।
এতদসত্ত্বেও এ দেশের কওমি উলামা-তলাবা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে মাঠে ছিলো শুরু থেকে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পানি ইত্যাদি বিতরণের মাধ্যমে। নিজের ক্ষতি হবে জেনেও অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় তাদের পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন নানাবিধ পোস্ট ইত্যাদিতে । বলতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক পরোক্ষ ও পার্থক্য বিভিন্নভাবে এ আন্দোলনে জড়িত ছিল। ঢাকা যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা, হাটহাজারী মাদ্রাসা, পটিয়া মাদ্রাসা, চরমোনাই মাদ্রাসা সহ শীর্ষস্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জীবনের তোয়াক্কা না করে সরাসরি মাঠে ছিলেন। আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, জীবন ও হারিয়েছেন অনেক ছাত্র। ছাত্রদের পক্ষে কথা বলাই অনেক ইমাম খতীব মসজিদের চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় মাদ্রাসার ছাত্র নিহতের সংখ্যা ৭০ – ৭৩ জন দেখালেও নিহতের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। আবার কেউ কেউ এখনো হাসপাতালের বিছানায় রয়েছেন।
অতীতে আলেমদের কোনো আন্দোলনে আপামরজনসাধারণকে আলেমদের সাথে দেখা যায়নি।২০১৩ সালের শাপলাচত্বরে সাধারন শিক্ষার্থীরা ছিল না আলেম উলামাদের সাথে । এরপরে মোদি বিরোধী আন্দোলনেও মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক রক্ত ঝরিয়েছে, সাথে অন্যদের দেখা না মিললেও ২৪ এর মুক্তি আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কৃষক শ্রমিক, ব্যাবসায়ী, সুশীল সমাজ, শিল্পী সমাজ, চাকরিজীবী সহ বিদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যেমন ছিলেন । তাদের চেয়ে কার্যকরী ভূমিকায় সর্বাগ্রে ছিলেন স্বার্থহীন এই আলেমসমাজ। এতে আলেম উলামাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।
মূলত এ আন্দোলন ২৪ এ নয়, সরকার পতনের আন্দোলনের আগুন জলতেছিল ২০০৮ থেকে। তখন থেকে বছরের পর বছর এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান উলামায়ে কেরামগণ পিশিত হয়েছে সর্বত্র ।
শেষমেশ যখন গণ-অভ্যুত্থানের ডাক এলো তখন সিংহভাগ আলমেরা রাজপথে। সর্বশেষ গণভবন ঘেরাও করার সময় সমগ্র দেশব্যাপী কারফিউ ভেঙে বিশাল মিছিল নিয়ে গণভবনে ঢুকতে যাকে দেখা গেছে তিনি হলেন একজন আলেম ; ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মওলানা ফয়জুল করিম দাঃবাঃ।
কাজেই একথা সর্বোতভাবেই সর্বসম্মতভাবে স্বীকার করতে হবে যে, এ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে আলেম উলামাদের অবদান অনুদান অনস্বীকার্য।
সুতরাং আলেম উলামদের পিছু রাখা যাবে না, দেশ সংস্কারে, বিসর্জিত জীবনের দাবি পুরণ করতে আলেমদের পাশে রাখা চাই । দেশ ও জণগণ কে বাস্তবিক জুলুম মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত, সুদ ঘুষ মুক্ত করতে এবং সুন্দর সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়তে একজন আলেমের প্রতিনিধিত্বই সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে।