পটিয়া প্রতিনিধি- পটিয়ারপূর্ব হাইদগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় গত ৩০ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নিরহ দিনমজুর সামশুল আলম (৪০)। তার মৃত্যুতে অবুঝ দুই সন্তান কানিজ ফাতিমা (১১) ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৭) কে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্ত্রী সুমি আক্তার। এতে দুই সন্তানের ভরণপোষণ ও পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ দুশ্চিন্তাই চোখে অন্ধকার দেখছেন দুই সন্তান নিয়ে স্বামী হারা গৃহবধূ সুমি আকতার। খুনি চক্র স্বামী হারা বাদীর স্বজনকে ঘায়েল করতে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ করেছেন।
স্বামী হত্যার বিচার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং আমার স্বামী আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকাকালে তার প্রতিবেশী যারা তাকে আর্থিক ও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে তাদেরকে উল্টো চুরি ও ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর প্রতিবাদে ৬ জানুয়ারি গতকাল সোমবার দুপুরে পটিয়া পৌর সদরে একটি রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে করেন গৃহবধূ সুমি আকতার। এসময় তিনি স্বামী হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবী জানান।
লিখিত বক্তব্যে সুমি আকতার জানান, গত ১৪ নভেম্বর হাইদগাঁও সাতগাছিয়া দরবার শরীফ এলাকা হতে লেবু বিক্রি করে পটিয়া সদরে ফিরছিলেন দিনমজুর সামশু। পথিমধ্যে ভাঙাপুল এলাকায় পূর্ব শক্রতার জের ধরে তাকে মারধর করে করা হলে পটিয়া থানায় তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষ ইউনুচ, নাছির, রফিক, মাঈনুল, রাজ, আবু মোরশেদ, মারুফ, মো: মুছা, মিন্টু, সায়েমসহ ২৫-৩০জন পাশ্ববর্তী লোক গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ভাঙাপুল এলাকায় তার পথরোধ করে।
এসময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে লোহার রড, লাঠি সোটা নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। এসময় তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ রক্তাক্ত হয়ে যায়।
এ অবস্থায় মাটিতে লুঠিয়ে পড়া সামশুকে টানাহেঁছড়া করে ইউনুচের পাশর্^বর্তী মুদি দোকানের গুদামে লুকিয়ে রাখেন। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী গিয়ে তাকে রক্তাক্ত মূমুর্ষ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ ডিসেম্বর সকালে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
আরো জানা যায়, পথিমধ্যে হাইদগাঁও ভাঙাপুল এলাকায় পৌছালে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওৎ পেতে থাকা স্থানীয় সন্ত্রাসী ইউনুছ প্রকাশ বাচা’র নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন তার উপর লোহার বড়, হাতল ও কিরিচ দিয়ে হামলা চালায়। এই সময় লোহার রড কিরিচের আঘাতে তার মাথা তেতলে যায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মকভাবে জখম হয়। বেদড়ক পিটানোর পর মৃত্যু হয়েছে ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে যায় তাকে। হামলার সময় শত শত লোকজন বেরিয়ে আসলেও ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
এরপর গত ২২ ডিসেম্বর নিহত দিনমজুর সামশুর স্ত্রী সুমি আকতার বাদী হয়ে মো: ইউনুচ প্রকাশ বাঁচাকে প্রধান আসামী করে ১৬জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪/৫জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নিহতের সামশুর স্ত্রী সুমি আকতার বলেন, তাদের একটি জায়গা ভুমিদস্যু মোহাম্মদ ইউনুচ নানাভাবে গ্রাস করতে চেয়েছিল। আমার স্বামী বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে আমার স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও লাঠি এবং লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। তিনি আরো বলেন, আমার দুই অবুঝ অসহায় সন্তান নিয়ে আমি কোথায় কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবো। তাদের বরণপোষণ ও পড়ালেখা অনিশ্চত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জায়েদ মো: নাজমুন নুর বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদেরও গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।